মোহাম্মদ সেলিম উদ্দীন সৌদি আরব থেকে –

রিয়াদ ঃ সৌদি আরবের রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে নানা আয়োজনে প্রবাসীদের নিয়ে আনন্দ উৎসবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে গতকাল দূতাবাসে “পদ্মা সেতু- উন্নয়নের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ” শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়া দূতাবাসের অডিটোরিয়ামে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। রিয়াদের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রবাসীরা এতে যোগ দেন। এ উপলক্ষ্যে দুদিনব্যাপি দূতাবাস ভবনকে লাল সবুজ আলোয় সজ্জিত করা হয়।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম(বার) বলেন, পদ্মা সেতু শুধুমাত্র একটি ইস্পাত, কংক্রিটের সেতু নয় বরং পদ্মা সেতু বাঙ্গালীর অহংকার, পদ্মা সেতু আমাদের গর্ব, আমাদের আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা, দক্ষতা এবং সক্ষমতার প্রতীক। এজন্য আজ এ সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে দেশের পাশাপাশি বিদেশের সকল মিশনসমূহেও আজকের এ বিশেষ দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। ইতিহাসের পাতায় এ দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যেমন সমার্থক, তেমনি উন্নত বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দুটি নাম ও সমার্থক।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, জাতির পিতার সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল, সাহসী ও দুরদর্শী নেতৃত্বের কারণে আজ স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শুধু এই পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখেননি, তিনি পুরো জাতির মাঝে সেই স্বপ্নের বীজ রোপিত করেছেন। আজ সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সৌদি প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান রাষ্ট্রদূত।

রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় প্রত্যয়, অসম সাহস ও প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস এর কারণে আজ এই পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। আজ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলার সাথে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগের এক নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হল, যা এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান বদলে দিবে। এই অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হলো আজ।

রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগ ও বিশ্বব্যাংকের ঋণ বন্ধ করে দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নিজের অর্থে এই সেতু করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সে দুরদর্শী সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক ও সময়োপযোগী ছিল তা নিশ্চয়ই এখন সবাই উপলব্দি করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা এই বাংলাদেশকে একটি সোনার বাংলায় উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র পদ্মা সেতুই নয় এছাড়াও মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ আয়ের দেশে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে তিনি কাজ করে চলেছেন। রাষ্ট্রদূত এ সময় প্রবাসীদের বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার আহবান জানান।

এসময় সৌদি আরবের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি বিষয়ে কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এম এ ওয়াদুদ, রপ্তানী আয় বৃদ্ধি বিষয়ে ব্যবসায়ী এম এ জলিল, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ী এম আর মাহবুব, পদ্মা সেতু এর অর্থনৈতিক পর্যালোচনা বিষয়ে দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সেলর মুর্তুজা জুলকার নাঈন নোমান ও দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন বিষয়ে মিশন উপপ্রধান আবুল হাসান মৃধা বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় পদ্মা সেতু নিয়ে তথ্যচিত্র ও থিম সং পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রবাসীরা আনন্দ উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।